Classified

ইসরায়েলে হামাসের হামলা যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দিয়েছে
Published on: 2024-12-26
৭ অক্টোবর, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠী ‘হামাস’ একটি অভিযান শুরু করে যা ইসরায়েলকে অবাক করে দেয়। দখল করে নেয় ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনা এবং বসতি, যার ফলে নিহত হয় প্রায় ১,৪০০ ইজরায়েলি। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গাজায় আরেকটি যুদ্ধ শুরু করে ইজরায়েল, আরোপ করে সম্পূর্ণ অবরোধ; নিরলস বোমাবর্ষণ করে বেসামরিক ভবন ও অবকাঠামোতে। হামাসের এই হামলা শুধু ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষের পথই বদলে দেয়নি, বরং বদলে দিয়েছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণও। এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্ট্র্যাটেজি ডি-এস্কেলেশনকে (আঞ্চলিক উত্তেজনা হ্রাস) নড়বড়ে করে দিয়েছে, কঠিন অবস্থানে ফেলেছে আরব অঞ্চলের সরকারসমূহ ও ইরানকে, এবং খুলে দিয়েছে চীনা ও রাশিয়ান সম্পৃক্ততার বৃহত্তর দরজা। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্ট্র্যাটেজি চুরমার গত তিন বছর ধরে বাইডেন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা সীমিত করার চেষ্টা করে চলছে, এবং তার ‘পিভট টু এশিয়া’ নীতির অংশ হিসেবে চীনের দিকে বেশি মনোনিবেশ করছে। এটা করতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ (নরমালাইজেশন) এবং ইরানের সাথে উত্তেজনা কমিয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ‘শীতল’ করার চেষ্টা করছিল। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে চীনা প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করার এবং ভারত, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপকে সংযুক্ত করে একটি ‘অর্থনৈতিক করিডোর’ নির্মাণের মাধ্যমে ভারতের শক্তি বৃদ্ধিরও প্রত্যাশা করছিল। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডোরের দুটি অংশ- একটি পূর্ব করিডোর, যা ভারতকে আরব উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সাথে সংযুক্ত করবে, এবং একটি উত্তর করিডোর, যা জর্ডান এবং ইসরায়েল হয়ে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোকে ইউরোপের সাথে সংযুক্ত করবে; যা মূলত চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ এর বিপরীতে মার্কিন প্রতিক্রিয়া বলে মনে করা হচ্ছে। হামাসের হামলা এই পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। প্রথমত, এটি কার্যকরভাবে ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে স্বাভাবিককরণ প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করেছে, বাধাগ্রস্ত করেছে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার ধারণাকেও। দ্বিতীয়ত, এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি হ্রাস করার নীতি থেকে সরে আসতে এবং আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতির আদেশ দিতে বাধ্য করেছে। পেন্টাগন পূর্ব ভূমধ্যসাগরে একটি বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করেছে, আরেকটি মোতায়েন করেছে আরব উপসাগরে। একসাথে এই দুই রণতরী ১০০টিরও বেশি আক্রমণ ক্ষমতা সম্পন্ন বিমানের পাশাপাশি ‘টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত ক্রুজার, ডেস্ট্রয়ার এবং সাবমেরিন বহন করছে। ওয়াশিংটন বলেছে, কোনো তৃতীয় পক্ষকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরেকটি ফ্রন্ট (রণাঙ্গন) খুলতে বাধা দেওয়ার জন্য এই সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।